মাউন্ট মঙ্গানুই টিম বাংলাদেশের ভাগ্যে আজ যাই লিখে রাখুক, সিরিজটা যে হারতে হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। তবে এ বছর টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ জয়ের রেকর্ডটা শতভাগ করে রাখতে চাইলে, আগের তিনটি সিরিজের মতো এই সিরিজটাও নিজেদের করতে চাইলে আজ কিছুতেই হারা চলবে না টাইগারদের।
ঠিকই পড়েছেন, বিদায় নিতে যাওয়া ২০২৩ সালে ক্রিকেটে ক্ষুদ্র সংস্করণে যে তিনটি সিরিজ টাইগাররা খেলেছে, জয় পেয়েছে প্রতিটিতেই। এর মধ্যে পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই করার গৌরবও আছে। ঘরের মাঠে ক্রিকেটের জনকদের মতো আফগানিস্তানকেও ধবলধোলাই করেছে টাইগাররা। এর ফাঁকে সিরিজ জিতেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও। সবমিলে চলতি বছর ১৩ টি-টোয়েন্টি খেলে কেবল দুটি হার দেখেছে তারা, জয় তুলেছে ১০টিতে।
হিসাবে থাকা বাকি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড। সেটি এই মাউন্ট মঙ্গানুইয়েই, দুদিন আগে। বেরসিক বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবারের ম্যাচটা ভেসে না গেলে হয়তো সিরিজ জেতা হয়েই যেত, সে ক্ষেত্রে আরও নির্ভার হয়েই আজ শেষ ম্যাচটি খেলতে নামত নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আক্ষেপটা হয়তো আছে। তবে সেটাকে পাশ কাটিয়েই বছরের শেষটা জয়ে রাঙানোর অপেক্ষায় টাইগার শিবির। যে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড জয়ের শুরু, এবার সেই জয়ের চক্র পূরণ হয়েছে। এবার যদি মাউন্ট মঙ্গানুইয়েই প্রথম সিরিজ জয়ের উপলক্ষটা আসে, তা দারুণই হবে।
দারুণ একটা বছরের শেষটা নিয়েও তখন আর আক্ষেপ থাকবে না। ‘দারুণ’ না বলে টি-টোয়েন্টির হিসেবে বছরটাকে সেরা বলাই ভালো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই সংস্করণটি আবির্ভাবের পর থেকে এমন সাফল্যময় বছর যে আর পায়নি টাইগাররা। এমন বছরের শেষটা ভালো না হলে চলে? তা ছাড়া নতুন বছরের মাঝামাঝিতে আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে, সেখানে ভালো করার জন্য বাড়তি আত্মবিশ্বাসও তো লাগবে, তাই শেষটা জিততে মরিয়া হয়েই আছে টাইগাররা। তাওহিদ হৃদয় যেমন বলেছেন, ‘প্রতিটা খেলোয়াড়ের জন্য ম্যাচগুলো অনেক বড় সুযোগ। আমরা চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগাতে। সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ, আমার মনে হয় সবাই সেভাবেই কাজ করছে।’
যে নিউজিল্যান্ড এতদিন দুর্বোধ্য ধাঁধা হয়েছিল, এবার সেই ধাঁধার জট খুলতে পেরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে টাইগার শিবির। সবশেষ দুই ম্যাচে পাওয়া জয়ের দিকে ইঙ্গিত করে হৃদয় বলেছেন, ‘দলের পরিবেশ ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। দল ভালো করলে সবকিছুই ভালো থাকে, এটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো-সবাই সবাইকে সমর্থন করছি। কোচ থেকে শুরু করে সবার এই বিশ্বাস আছে যে আমরা পারব। গত কিছুদিন এই সংস্করণে ভালোও করেছি।’ এই তরুণ যোগ করেন, ‘আমরা খেলোয়াড়রা জেতার জন্যই মাঠে নামি। কে আছে, কে নেই-এত কিছু দেখি না। আমাদের মধ্যে ওই শরীরী ভাষা থাকে, যেন জিততে পারি। আমাদের বিশ্বাস আছে ভালো করব।’
শুধু দলের খেলোয়াড়দেরই নয়, জাতীয় দল নির্বাচকদেরও বিশ্বাস-ভালো করবে দল। নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন যেমন বলেছেন, ‘আমরা আগে টি-টোয়েন্টিতে পিছিয়ে ছিলাম। এখন ভালো পারফর্ম করা শুরু করেছি। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকেও সিরিজ হারিয়েছিলাম আমরা। এবার নিউজিল্যান্ড গিয়ে ভালো করছি। তো অবশ্যই আশা করতেই পারি, সামনে আরও ভালো খেলব।’ অর্থাৎ টাইগার শিবির এখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। তাতেই যেন ঘরের মাঠে সিরিজ বাঁচানো নিয়ে কিছুটা বাড়তি চাপে পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড শিবির। দলটির কোচ গ্যারি স্টিডের কথায় তেমনই আভাস।
সিরিজের আলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা বছরের শেষ ম্যাচটিকে সামনে রেখে স্টিড বলেছেন, ‘ছেলেদের সত্যিকারের চাপে দেখছি আমরা। সিরিজ জেতা কিংবা হারার পরিণতি তারা জানে। এটা এখনও নির্দিষ্ট দিনে মাঠে গিয়ে ভালো খেলার ওপর নির্ভর করছে।’ দারুণ পারফর্ম করে টিম বাংলাদেশই যে স্বাগতিকদের চাপে রেখেছে, সেটাও স্বীকার করেছেন নিউজিল্যান্ড কোচ। তবে তিনি এটা পরিষ্কার করেই জানিয়ে দিলেন, চাপে থাকলেও ছাড় দেবে না তার শিষ্যরা, ‘প্রতিটি ম্যাচই আমরা জেতার চেষ্টা করি।’
সেই চেষ্টায় স্বাগতিকরা আজ যাতে সফল হতে না পারে, বছরের শেষটা জয়ে রাঙাতে সেদিকেই মনোযোগ টাইগারদের।
সময়ের আলো/আরএস/