ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

কৃষিকাজেও ব্যবহার করা যায় না নদীর পানি
প্রকাশ: রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৪:২১ এএম  (ভিজিট : ৪১৪)
দূষণের বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে হবিগঞ্জ জেলার নদ-নদীর পানি। কলকারখানার বর্জ্য, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং না করা, দুই পার দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ ও অবাধে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে নদীগুলোর অস্তিত্ব। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র ৫০ বছরে বিলীন হয়েছে অর্ধেকের বেশি নদী। যেগুলো আছে সেগুলোও দূষণ আর দখলে মৃতপ্রায়। দূষণের তীব্রতা এতই বেশি যে, নদীর পানি দিয়ে কৃষিকাজ পর্যন্ত করতে পারেন না কৃষকরা। 

জেলার উল্লেখ্যযোগ্য নদীর মধ্যে সীমান্ত অতিক্রমকারী খোয়াই, সুতাং, সোনাই, কুশিয়ারা নদী নানাবিদ সমস্যা ও সঙ্কটের সম্মুখীন। সোনাই নদীর ওপর বিশাল স্থাপনা, সুতাং নদীতে কলকারখানার বর্জ্য ফেলে নদী ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সুতাং নদীকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বিপাকে। 

দূষণযুক্ত পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, নদীতে পাওয়া যাচ্ছে না মাছ। অসহনীয় দুর্গন্ধে নদী পারের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। চর্ম রোগ, শ্বা সকষ্টসহ জটিল রোগে ভুগছে নদী পারের মানুষ।

সদর উপজেলার রাজিউড়া গ্রামের কৃষক মো. জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, বাড়ির পাশদিয়ে বয়ে চলা সুতাং নদীতে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া গেছে, এখন কালো কুচকুচে পানিতে মাছ ধরা তো দূরের কথা দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। কৃষক আব্দুর রকিব বলেন, সুতাং নদীর পানি দিয়ে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করা যেত। কলকারখানার কালো পানি নদীতে আসায় এ পানি চাষাবাদে কাজে লাগছে না। ফসল উৎপাদন কমে গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, হবিগঞ্জ শহরের বেশির ভাগ ময়লা-আবর্জনা খোয়াইমুখ এলাকায় নদীতে ফেলা হয়। এ ছাড়া মেশিনের যন্ত্র দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশের স্থানে স্থানে ছড়া পড়েছে। বড় বড় গর্ত হয়েছে ট্র্যাক্টর দিয়ে বালু মাটি পরিবহনের কারণে এবং নদীর তলদেশ শহর থেকে কয়েক ফুট উঁচু হয়ে যাওয়ায় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে শহরবাসীকে থাকতে হয় আতঙ্কে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালনি-কুশিয়ারা (ভেড়ামোহনা), মরা কুশিয়ারা, মরা বিবিয়ানা, হাওয়াই, সুটকী, ঝিংড়ি, ঘরদাইর, রত্না, শাখাবরাক, করাঙ্গী, বিজনা, সুতাং, সোনাই, বছিরা, হাঙ্গরভাঙা প্রভৃতি নদ-নদী বিলীনের পথে। বর্তমানে নদীগুলোয় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সরু খালে পরিণত হয়েছে। 

নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদ-নদী ড্রেজিং না করা এবং বিভিন্ন স্থানে এসব নদীর দুই পার দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীগুলো থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় নদ-নদী অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া হাওরাঞ্চলে নদীগুলো মরুভূমির রূপ ধারণ করতে চলেছে। 

বর্ষা মৌসুম কিংবা অন্য যেকোনো মৌসুমে খোয়াই নদীতে বান দেখা দেয়। ভাঙনের সৃষ্টি হয় নদীর তীর। আর ভাঙন মানেই হাজার হাজার একর ফসলহানি এবং মানুষের দুর্ভোগ। যোগাযোগ, মালামাল পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম খোয়াই নদীকে খননের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করেন নদী গবেষকরা। 

খোয়াই নদীতে দখলবাজরা শুধু নদীর পার দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা প্রবহমান নদীর পানিতে বাঁশ-কাঠের মাচা তুলে বানিয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট। পানি প্রবাহে বাধা দিয়ে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। 

খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ ও যোগাযোগ, মালামাল পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম খোয়াই নদীকে খননের আওতায় আনা জরুরি প্রয়োজন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, নদী রক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা দেখছি না। আমরা সচেতনতার চেষ্টা করছি। নদ-নদী পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন না করলে হবিগঞ্জের পরিবেশ-প্রতিবেশ যে অবস্থায় রয়েছে ভবিষ্যতে তা আরও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। 

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘সুতাং নদী খননের পরিকল্পনা তৈরি করা আছে। আশা রাখি আগামী বছরই খননকাজ শুরু হবে। করাঙ্গী নদীসহ আরও কয়েকটি নদীর খননকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আর খোয়াই, কুশিয়ারাসহ আরও কয়েকটি নদী খননের জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে খননকাজ হবে, তবে সময় লাগব।’

/এসকে


আরও সংবাদ   বিষয়:  নদী  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close