ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্ব পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে নয়
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:২০ এএম আপডেট: ০১.০১.২০২৩ ৬:২৩ এএম  (ভিজিট : ৪১২)
আরও একটি বছর চলে গেল। ২০২২ সালে নিজের দেশ ও বহির্বিশ্ব অনেক টানাপড়েন আমরা দেখেছি। বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসলমান দেশগুলোতে সংকট এবং সেখানে আগ্রাসী ভূমিকা আছে। আধিপত্য বিস্তার করছে পুঁজিবাদী দেশগুলো। তাতে করে মুসলিমরা মনে করছে, আগে ছিল সোশ্যালিজম বা কমিউনিস্টদের সঙ্গে পুঁজিবাদের লড়াই, এখন লড়াইটা হচ্ছে পুঁজিবাদী বনাম ইসলাম।

আমি হাসতে হাসতে বলি, বক্তৃতায় বলি অনেক জায়গায়, মজা করে বলি, রাজশাহীতেই বলে আসলাম- এখানে অনেকে বসে আছে, কারও চেহারা চাকমাদের মতো, মনে হয় তারা চাকমা জাতিসত্তার মানুষ। অনেকের দেখছি মাথায় পাগড়ি, হয়তো শিখ হবে। কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান এটা আমরা বলছি না। প্রথম দেখাই আমরা বলি ককেশিয়ান, চাইনিজ, জাপানিজ ও ইন্ডিয়ান। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যটা আমরা জাতিসত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করি এবং এর মধ্য দিয়ে আমরা তার পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করি। ধর্ম দিয়ে নয়। সুতরাং যেকোনো জায়গায় নৃতাত্ত্বিক পরিচয়টা দিলে সেটা অসাম্প্রদায়িক হয় এবং সেটা মানুষের সম-অধিকারের জায়গাটাকে অনেক বেশি স্বচ্ছ করে। আমাদের নিজেদের বোঝাতে হবে যে, বাঙালি জাতিসত্তা কিন্তু এমনিতেই ধর্মের আগে আসে।

এখানে পলিটিক্যাল ইসলাম ক্রমশ ভায়ালেন্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে একজন সাধারণ মুসলমানও ভাবছে ওরা তো আমাদের মুসলমান ভাইদের মারছে, তাহলে তাদের মারাটা বোধহয় ঠিক। এই যে সাইকোলজিক্যাল একটা ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েছে আমাদের মুসলিম জনগোষ্ঠী, সারা পৃথিবীতে।

অন্যদিকে ক্রমশ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমাজ এবং রাষ্ট্র ধর্মের সঙ্গে একটি অবৈধ চুক্তিতে যাচ্ছে। সমঝোতায় যাচ্ছে। এটার বৈধতা আমাদের সংবিধান দেয় না, এটার বৈধতা আমাদের সংস্কৃতি দেয় না, এটার বৈধতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেয় না। সুতরাং আপনারা যে-ই হোন না কেন, যা-ই করেন না কেন, যে সমঝোতা ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সঙ্গে করেন না কেন, এটা প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া গ্রহণ করার কোনো রকম অবকাশ নেই। আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে যখন থাকি, সময়টা কেটে যায়। একা যখন হই, তখন পীড়া দেয়। কষ্ট পাই। ক্ষোভ হয়।

রাষ্ট্রটা মুক্তিযুদ্ধের জায়গায় থাকুক। চেতনার জায়গায় থাকুক। মানুষের জায়গায় থাকুক। রাষ্ট্রটা তো শুধু বাঙালির না, শুধু মুসলমানের না, রাষ্ট্রটা মানুষের হোক। এটার জন্যই তো লড়াই। এটা আমাদের জন্য চরম হতাশার জায়গা তৈরি করেছে মানসিকভাবে। যেকোনো মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলবেন, দেখবেন, সে খুব অস্থির। ভালোভাবে সে সবকিছুকে নিতে পারছে না। তার মধ্যে অনেক অসঙ্গতি দেখা যায়। খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এগুলোর কারণ আছে। প্রাপ্তিটা তো ব্যক্তির জন্য না। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জায়গাটা দেশকে কেন্দ্র করে হয়েছিল।

আমাদের কাজটা হলো রাষ্ট্রকে খবরদারিটা করতে হবে। এমনকি আমাদের যে বাংলা এডুকেশন, সেটাতেও অনেক ত্রুটি আছে। সেগুলোকেও অনেক মানবিক করতে হবে। আমার মনে হয় এটাকে আরও আধুনিক করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, শত বর্ষের কাজ পড়ে গেছে শেখ হাসিনার ওপরে। তিনি কী করে এখান থেকে টেনে তুলবেন- আমি মাঝেমধ্যে ভাবি তার কষ্টের কথা, তার চ্যালেঞ্জের কথা। জঙ্গিবাদকে এভাবে কেউ মোকাবিলা করত না। শুধু যুদ্ধাপরাধীর যে বিচার হয়েছে তা-ই না। জঙ্গিবাদকে যে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। এই দিকটায় তাকে আমি অনেক শ্রদ্ধার জায়গায় রাখি। সবকিছু ধরে তিনি টান দিচ্ছেন।

আমার কথা হচ্ছে সব ধর্মের মানুষের সম-অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। একটা লোক এই বইটা পড়ে যেন মনে না করে এই বইটা তার নয়। এমন মনে হলে তার খটকা লাগবে। সে আর বইটার ভেতর ঢুকবে না। আমি মনে করি যার যার ধর্ম তার তার। লাকুম দ্বীনুকুম ওলিয়া দ্বীন। সবাই যার যার ধর্ম পালন করুক। আমি মুসলিম পরিবারের মানুষ। বাঙালি কিন্তু মুসলিম। বাবাকে দেখেছি খুব সুন্দর করে দরুদ শরিফ পড়তেন। সকালবেলা সুরা পড়তেন জায়নামাজে বসে। আবার নামাজের পর চা-টা খেয়ে- ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধুলার তলে’- রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। আবার মাঝেমধ্যে শেষ বয়সের দিকে এসে গাইতেন- ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। একজন মানুষকে তো এভাবেই আমি দেখার চেষ্টা করব।

আমার কথা হচ্ছে, শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দেশটা স্বাধীন হতে পারে। কিন্তু স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পরে দেশটা সব জাতির সব বর্ণের সব মানুষের। মুক্তিযুদ্ধ তো এই প্রেরণাটাই আমাদের দিয়েছে। এটা করা উচিত এবং আমার আকাক্সক্ষা এটা। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো হবে না। কিন্তু একটু দূরের দিকে যদি তাকাই, আমার মনে হচ্ছে, নতুন যে প্রজন্ম উঠে আসছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ভেতর দিয়ে তাদের মানসিক যে জায়গা তৈরি হচ্ছে, বিজ্ঞান যেখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে, যুক্তি যেখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে আধুনিক বিশ্বে; সেখানে একটা সম্ভাবনার জায়গা দেখতে পাই। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি কিন্তু আমাদের পক্ষে নয়।

আসছে নতুন বছর। নতুন বছরে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যেন নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা করি।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close