ই-পেপার সোমবার ১৩ মে ২০২৪
সোমবার ১৩ মে ২০২৪

শেয়ারবাজার
কাজে লাগছে না কোনো দাওয়াই
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৪:১২ এএম আপডেট: ২৭.০৪.২০২৪ ৭:২৮ এএম  (ভিজিট : ১৯৫)
পড়তে পড়তে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে দেশের শেয়ারবাজার। পতন ঠেকাতে মাঝেমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোনো দাওয়াই কাজ হচ্ছে না। বাজার চাঙ্গা করতে প্রথমে প্রায় দুই বছর পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তাতে বাজারের পতন পরিস্থিতি কোনো উন্নতি হয়নি। এর পর মাঝেমধ্যে ছোট কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয় শেয়ারবাজারে সার্কিট ব্রেকারের (দাম কমার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা) নতুন নিয়ম চালু করার। এতেও কোনো কাজ হলোই না, উল্টো যে দিন থেকে নতুন এই নিয়ম কার্যকর হলে গত বৃহস্পতিবারই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলো।

অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিএসইসি যে পদক্ষেপই নিচ্ছে তার প্রতিও তারা আস্থা রাখতে পারছেন না। তা ছাড়া বিএসইসির হুটহাট করে নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণেও বাজার আরও পড়ে যাচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, বিএসইসিই চায় না দেশের শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো হোক। সংস্থাটি যে আসলে কার পক্ষে বা কার উপকার করতে হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি আমার বুঝে আসে না। তবে এটা বলতে পারি, সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য বিএসইসি কিছুই করছে না। সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হলো নাকি বাজার থেকে হারিয়ে গেল-তা নিয়ে সংস্থাটির কোনো মাথাব্যথা নেই, বা তাতে সংস্থাটির কর্তাব্যক্তিদের কিছু যায়-আসেও না। আমি মনে করি বড় দুটি কারণে দেশের শেয়ারবাজারের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। এর একটি হলো-বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওপর ও বিএসইসির ওপর এখন সামান্যতম আস্থা নেই। বিএসইসি নীতিনির্ধারণী যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তার প্রতি বিনিয়োগকারীরা কোনো আস্থা রাখতে পারছে না।বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে দিগভ্রান্তের মতো ছুটছে। তারা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না। যে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদেরই কোনো আস্থা নেই, সে বাজার কীভাবে চাঙ্গা হবে।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বড় কারণ হলো-বিএসইসি বাজার চাঙ্গা করতে এখনও পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার একটিও সুচিন্তিত বা ভাবনা-চিন্তা করে নেয়নি। প্রয়োজনের সময় যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল সংস্থাটি সেটি করেনি। অনেক ক্ষেত্রেই আগপিছ চিন্তা না করেই হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ কারণেই সংস্থাটির কোনো দাওয়াই কাজে লাগছে না বাজারে।

বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশের শেয়ারবাজারের নাজুক অবস্থা। নেই কোনো বড় কোম্পানির বিনিয়োগ, নেই কোনো বিদেশি বিনিয়োগ। মাঝেমধ্যেই দুর্বল কোম্পানির দর বাড়িয়ে বাজারে কারসাজি করা হচ্ছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী লোভে পড়ে বিনিয়োগ করে পুঁজিপাট্টা হারাচ্ছেন। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ দিন এভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলে বাজার একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে গত ১৮ জানুয়ারি প্রায় দুই-আড়াই বছর পর শেয়ারবাজারে প্রথমে ৩৫টি কোম্পানি ছাড়া বাকি সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। গত ১৮ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে বিএসইসি। আদেশে বলা হয়েছিল, সরকারের নির্দেশনা মেনে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পর গত ২২ জানুয়ারি আরও ২৩টি কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সর্বশেষ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এই ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি বড় অংশের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে যায়। এতে করে প্রায় দেড় বছর এসব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হচ্ছিল না। এর ফলে পুঁজিবাজারে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে এ সিদ্ধান্তের পর তিন মাস পার হয়ে গেলেও বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

এর পরও যখন পতন ঠেকানো যাচ্ছে না তখন গত বুধবার শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশে বেঁধে দেয় বিএসইসি। বুধবার বিকালে এ আদেশ জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে গত বৃহস্পতিবর থেকে তালিকাভুক্ত কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ ছিল না। তবে এ নিয়ম কার্যকর করার পর লেনদেনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার প্রথম ঘণ্টাতেই ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। এ সময় লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ পর্যন্তই কমে যায়। ফলে দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হয়। দরপতনের সীমা বেঁধে দেওয়ার দিনেই বাজারে বড় দরপতন হয়।

এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলসূচক ডিএসইএক্স দিন শেষে ৬০ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে নেমে আসে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে। গত তিন বছরের মধ্যে এটিই ছিল ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ৫১১ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। একই দিন দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ১৬৪ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে যায়। সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়।

বৃহস্পতিবার লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০০টির বা ৭৬ শতাংশেরই দাম কমে। দাম বাড়ে মাত্র ৬৯টির বা ১৭ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির বা ৭ শতাংশের। এদিন ঢাকায় লেনদেন ছিল ৫১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯২ কোটি টাকা কম। আর চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৫ কোটি টাকা কম। সুতরাং বিএসইসি বাজার চাঙ্গা করার জন্য মূল্যসীমা বেঁধে দিলেও এতে হিতে বিপরীত হয়, বাজারের আরও পতন ঘটে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ‘বিএসইসি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজার চাঙ্গা করতে, বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফেরাতে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। তার চেয় বড় কথা হলো-শেয়ারবাজারে কিছু দুষ্ট চক্র রয়েছে, কিছু রাঘব-বোয়াল রয়েছে। এসব রাঘব-বোয়ালের স্বার্থ হাসিল করতেই বেশি সচেষ্ট থেকেছে বিএসইসি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা কখনোই ভাবেনি বিএসইসির কর্তারা।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close