অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দ্রুত সংস্কারের জন্য ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে। নতুন যিনি জ্বালানির উপদেষ্টা এসেছেন তার কাছ থেকে একটি ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা প্রত্যাশা করছি। বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন অনিয়ম হলেও বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন জরুরি। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে এগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার সিপিডির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। কুইক রেন্টালসহ বাড়তি ব্যয়ের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রিড সিস্টেমকে আপডেট করে স্মার্ট গ্রিড সিস্টেমে যেতে হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে তাদের শুল্ক পুনর্নির্ধারণের জন্য পুনরায় আলোচনা করা, বিশেষ করে যেসব কোম্পানিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যূনতম সময় পার করেছে। যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে। বিপিডিবি ও বিপিসিসহ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদনগুলো আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মের মাধ্যমে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। প্রি-পেইড মিটারে ঝামেলার কারণে রাজধানীর গ্রাহকদের বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে। ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে সিপিডির পক্ষ থেকে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন-২০১০ বাতিল করা দরকার। সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য এককভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত অনেকটাই দায়ী। ফলে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইনটি বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন পরিবর্তন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে।
সক্ষমতার ৪০ শতাংশই উদ্বৃত্ত থাকছে জানিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে ৪০ শতাংশ উদ্বৃত্ত উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। বাড়তি সক্ষমতা থাকার কারণে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত যদি এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা না বাড়ানো হয়, তারপরও কোনো সমস্যা হবে না। আগামী ২০৪১ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণে স্রেডার সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্রেডাকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীনে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্রেডাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। সেই লক্ষ্যে স্রেডার কাঠামো তৈরি করতে হবে। ভারত, চীন ও ইউকেতে যে ধরনের কাঠামো রয়েছে, সেভাবে স্রেডাকে গড়ে তুলতে হবে। বিপিডিবির অধীনে থাকা রিনিউঅ্যাবল উইংকে সরিয়ে শুধুমাত্র স্রেডার কার্যক্রম বাড়াতে গুরুত্ব দিতে বলছে সিপিডি।
নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্টে নীতি বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট নীতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ নিতে হবে। তা হলেই বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমে আসবে। ভর্তুকি দেওয়ার চাপও কমে যাবে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা মনে করি একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখার আলোকে যদি এগোনো যায়, তা হলে আগামী দিনে জ্বালানি রূপান্তরে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো আমরা দেখতে পাব। বাংলাদেশে জ্বালানি রূপান্তরের জায়গাতে ব্যাপক কার্যক্রম নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেই আলোকে সরকারের কার্যক্রমকে আমরা তিনটি ফেইজে ভাগ করেছি। ফেইজ-১ হচ্ছে ছয় মাসে, ফেইজ-২ হচ্ছে ৬ থেকে ১২ মাসে এবং ফেইজ-৩ হচ্ছে ১২ থেকে ৩৬ মাসে। এটা অন্তর্বর্তী সরকার করবে, নাকি নির্বাচনি সরকার করবে সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু আগামী দিনে অব্যাহতভাবে যদি এই পরিবর্তন দেখতে চাই তা হলে কার্যক্রমগুলো নেওয়ার দরকার আছে।
সময়ের আলো/আরএস/