ই-পেপার রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫

মার্কিন বাজারে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের
প্রকাশ: বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ৯:০৬ এএম  (ভিজিট : ৩৪৬)
পোশাক কারখানা। পুরোনো ছবি

পোশাক কারখানা। পুরোনো ছবি

দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ধারাবাহিকভাবে সফলতা আসছে। মোট রফতানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, ইউরোপের বাজারে আয় বৃদ্ধির পর এবার একক দেশ হিসেবে সর্ববৃহৎ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তৈরি পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধিতে সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর ধারে কাছেও নেই অন্য কোনো দেশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

রফতানিকারকরা বলছেন, মূলত তিনটি কারণে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে। এর মধ্যে আছে মন্দাভাব কাটিয়ে মার্কিন অর্থনীতি ভালোর দিকে যাওয়ায় দেশটির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প সরকার চীন ও মেক্সিকোর ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্কারোপের ফলে বাংলাদেশের বাজারের দিকে ঝুঁকেছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তৃতীয়ত, গত আগস্টের পর থেকে টানা তিন-চার মাস যে চরম অস্থিরতা চলেছে গার্মেন্টস খাতে, সে অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় বিরাজ করছে শিল্প এলাকায়। এর ফলে কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। এসব কারণেই মূলত মার্কিন বাজারসহ বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, গত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এ রফতানি গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধির এ হার চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। যেমন : মার্কিন বাজারে পোশাক রফতানিতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ, ভারতের ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, মেক্সিকোর মাত্র ১ দশমিক ২৬ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া হন্ডুরাসের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ২৬ দশমিক ১০ (-২৬.১০%) শতাংশ।

অটেক্সার হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা ৭২০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারিতে তারা আমদানি করেছিল ৬০৩ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক আমদানি বেড়েছে সাড়ে ১৯ শতাংশ।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এ বাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রফতানিতে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সাল শেষে বড় প্রবৃদ্ধি না হলেও ইতিবাচক ধারায় ফেরে। সব মিলিয়ে গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এ রফতানি ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি ২৫ শতাংশ কমে ৭২৯ কোটি ডলারে নেমেছিল। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় এ বাজার নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনার কথা বলেন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ সরাবে। ফলে বাড়তি ক্রয়াদেশ বা অর্ডার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের জন্য। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। 
বিনিয়োগের সেই সুযোগ বাংলাদেশও নিতে পারে। অবশ্য বর্তমানে পোশাক রফতানিতে যে প্রবৃদ্ধি, তা মূলত দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রভাব।

অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করে চীন। এ রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ১৪৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এ রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি।

কেন বাড়ছে রফতানি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সময়ের আলোকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তাদের অর্থনীতি ভালো হচ্ছে। এর ফলে দেশটির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়া নতুন বছরের শুরুতে দেশটিতে চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানিও বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন বাজারে পোশাক রফতানি বৃদ্ধির আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় বসেই পোশাক রফতানি বৃদ্ধির বড় কারণ ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় বসেই চীনের ও মেক্সিকোর ওপর শুল্কযুদ্ধ শুরু করায় মার্কিনিরা দেশ দুটি থেকে পোশাক কেনা কমিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকেছে। তাই আমাদের দেশের রফতানি বাড়ছে। এর বাইরেও আমাদের দেশের শিল্পকারখানার মান বেড়েছে। দেশেও খারাপ অবস্থা কাটিয়ে আমরাও ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। রফতানি আদেশও ভালো আসছে। সব মিলে আমাদের পোশাক রফতানি এখন ভালো হচ্ছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close