আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন চলছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বড় একটি অংশ আইনজীবী। জানা গেছে, নবীন-প্রবীণ মিলে প্রায় দেড়শ আইনজীবী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে অর্ধশতাধিক আইনজীবী এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দল থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন, আবার কেউ সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়।
অন্যদিকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়াসাপেক্ষে বিএনপি নির্বাচনে গেলে দলটি থেকেও অর্ধশতাধিক আইনজীবী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রাখছেন। তারাও দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়ে যাচ্ছেন। বড় দুই দলের বাইরে অন্যান্য দল থেকে বহু সংখ্যক আইনজীবী নির্বাচনে অংশ নেবেন। এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী আইনজীবী দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়াসহ এলাকায় প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠকে অংশ নেওয়া ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নৌকা নিয়ে ভোটে লড়তে প্রস্তুত অর্ধশত আইনজীবীর :
আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে অনেক আইনজীবী সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে আছেন। এ ছাড়া নবীন ও প্রবীণ আরও অনেকে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য ও হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, পঞ্চগড়-২ আসন থেকে রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন, পিরোজপুর-১ আসন থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম, হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসন থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, নাটোর-৩ (সিংড়া উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা-২ আসনের এমপি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাবো) আসনের সংসদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, চট্টগ্রাম-৯ আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর উপজেলা) আসনের এমপি আ. ক. ম. সারোয়ার জাহান বাদশা, মুন্সীগঞ্জ-৩ (গজারিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
এ ছাড়া নবীন-প্রবীণ আরও যারা প্রার্থী হতে পারেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট মো. মোখলেসুর রহমান বাদল, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট আশরাফুল হক জর্জ, অ্যাডভোকেট মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ড. বশির আহমেদ, ব্যারিস্টার এম. আশরাফুল ইসলাম আশরাফ ও ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ জগলুল কবির, মোহাম্মদ হোসেন, মনোয়ার হোসেন, এনামুল কবির ইমন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার, ব্যারিস্টার আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট এসএম ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ, বিপ্লব হাসান পলাশ, অ্যাডভোকেট মো. সাফায়ত হোসেন সজীব, অ্যাডভোকেট কুহেলি কুদ্দুস মুক্তি, অ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, অ্যাডভোকেট কায়সার আহমেদ, অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট জামিল হোসেন দুর্জয়সহ আরও অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।
ধানের শীষ নিয়ে এমপি হতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে :
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে দলের নেতৃত্বাধীন জোট ও ল’ইয়ার ফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে যাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন- ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিঙ্কু, ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, ব্যারিস্টার রাজিব প্রধান, ব্যারিস্টার ফজলুল করিম ম-ল, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন সুলতানা পুতুল ও ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নানসহ আরও অনেক আইনজীবী। মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকে সময়ের আলোকে বলেন, দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলেই কেবল তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, অন্যথায় নির্বাচনে যাবেন না।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনে ব্যারিস্টার এম. শাহজাহান ওমর বীর উত্তম তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও ২০০১ সালে আইন প্রতিমন্ত্রী হন। নোয়াখালী-১ আসনে ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন আগে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
অন্যান্য দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন যারা :
প্রধান দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে থেকে নির্বাচনে আগ্রহী যেসব আইনজীবীর নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, অ্যাডভোকেট মুহসীন রশিদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট এএসএম মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ব্যারিস্টার সিগমা হুদা ও ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম।
এর মধ্যে ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাবেক নেতা ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, একই আসনে ল’ইয়ার ফ্রন্টের নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের গঠিত এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদ, ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, একই আসনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী ব্যারিস্টার সিগমা হুদা ও কন্যা ব্যারিস্টার অন্তরা সেলিমা হুদা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে থেকে তৃণমূল বিএনপির হয়ে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন করতে চান।
সময়ের আলো/জেডআই