ই-পেপার রোববার ৫ মে ২০২৪
রোববার ৫ মে ২০২৪

গাজার গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:৫৪ এএম  (ভিজিট : ১৪৮)
একজন মা তার নিখোঁজ সন্তানকে সর্বত্র খুঁজে বেড়াবেনই এবং যতদিন পর্যন্ত তার শরীরে শক্তি আছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি তার খোঁজ থামাবেন না। এ ক্ষেত্রে তার সন্তান জীবিত না কি মৃত, সেটি কোনো বিষয় না তার কাছে। চার দিন ধরে কারিমা এলরাস গাজার আল নাসের হাসপাতালের গণকবরের কোলাহল, ধুলোবালি ও অসহনীয় দুর্গন্ধের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি ২১ বছর বয়সি সন্তান আহমেদের মা, যিনি গত ২৫ জানুয়ারি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে নিহত হন। কিন্তু এরপর থেকে আহমেদের মরদেহ নিখোঁজ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল কারিমা অবশেষে তার ছেলেকে খুঁজে পান। ‘আমি এখানে বারবার এসেছি,’ তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার ছেলের, আমার পুত্র আহমেদের, আমার আদরের ছোট্ট ছেলে, আমার ভালোবাসার মরদেহ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত। ওর বয়স যখন ১২ বছর, তখন ও ওর বাবাকে হারিয়েছে এবং তারপর থেকে আমিই ওকে বড় করেছি।’

অন্য পরিবারগুলো গণকবরের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। হতাশাজনক হলেও বিশ্বের সব যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলেরই খুব পরিচিত দৃশ্য এটি। মৃতদেরকে খুঁজে পাওয়ার জন্য বুলডোজারগুলো মাটি খুঁড়ছে। মাটির নিচ থেকে একটি শক্ত হাত প্রসারিত হয়ে আছে। কবর থেকে উত্তোলিত মরদেহ সমাধিস্থ করার জন্য আলাদা আলাদা স্থান চিহ্নিত করছেন খননকারীরা। প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলো আশা করে আছে যে কবর থেকে উত্তোলন করা মৃতদেহগুলোর মাঝে তাদের খুঁজে পাবে।

এমন দৃশ্যের ব্যাখ্যা সবসময় একই রকম না। প্রতিটি গণকবর-সেটি হোক বলকান অঞ্চলের দেশগুলো, মধ্য আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য অথবা অন্য কোথাও-সেখানকার স্থানীয় অবস্থার ফল। গাজায় এমন একটি যুদ্ধ চলছে, যেখানে ৩৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, যারা একটি জনাকীর্ণ স্থানে বসবাস করত। এখন এই মরদেহগুলোকে দাফন করা বেশ জটিল ও বিপজ্জনক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু করবস্থানে কোনো জায়গাই আর খালি নেই। আবার চলমান লড়াইয়ের কারণে অন্য কবরস্থানগুলোতে পৌঁছানোটাও অসম্ভব। এসব কারণে মরদেহগুলোকে হাসপাতাল চত্বরেই কবর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করার কথা বলছে।

গণকবরে পাওয়া শত শত মরদেহ কী মেডিকেল কমপ্লেক্সের ভেতরে ও চারদিকে হওয়া বিমান হামলা ও লড়াইয়ের শিকার? না কি তারা যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট কোনো রোগ ও অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে? না কি ইসরাইলি বাহিনী এই মরদেহগুলোকে একটি কবর থেকে আরেকটি নতুন কবরে স্থানান্তর করেছে? গত ২২, ২৩ ও ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কিছু ভিডিও যাচাই করে দেখেছে বিবিসি ভেরিফাই। সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে ফিলিস্তিনিরা গাজার আল-নাসের হাসপাতাল প্রাঙ্গণের দুইটি স্থানে মরদেহ দাফন করছে। পোস্ট করা সেই ভিডিওগুলোর মাঝে মিল রয়েছে। তাতে সারিবদ্ধ পাম গাছ ও অদূরে অবস্থিত ভবন দেখা গেছে।

চিকিৎসাকর্মী এবং বাস্তুচ্যুত বেসামরিক ব্যক্তিরা ওই এলাকাজুড়ে তীব্র লড়াইয়ের কথা জানায় এবং এরপর হাসপাতালটিকে ইসরাইলি বাহিনী ঘেরাও করে ফেলে। সেখানে অস্থায়ী দাফন করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলি অভিযান শুরু করার আগে কতগুলো মরদেহ দাফন করা হয়েছিল, তা নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৭ জানুয়ারি বলেছে যে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ১৫০ জনকে দাফন করা হয়েছে, কিন্তু এই সংখ্যাটি যাচাই করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, খান ইউনিস থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে একই সমাধিস্থল দেখানো হয়েছে। ভিডিওগুলোতে গাছে ও ভবনের একই রকম সারি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে যে, ৩৩০টিরও বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ওই মানুষগুলো কখন ও কীভাবে মারা গেলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।

ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের আগে ওখানে কতগুলো মরদেহ দাফন করা হয়েছে, নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই হিসাব রাখতে পারে। কিন্তু আমরা তা জানি না।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মধ্যে কেউ ছিল কি না, তা দেখার জন্য তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের কবরগুলো খুঁড়ে মরদেহগুলোকে বের করে পরীক্ষা করেছে এবং পরীক্ষা শেষে ‘তাদের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ কিন্তু স্কাই নিউজ ভিডিও এবং স্যাটেলাইট ইমেজ যাচাই করেছে। সেখানে দেখা যায় যে অভিযান পরিচালনার সময় ইসরাইলি বুলডোজারগুলো হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ওপর দিয়ে চলে গেছে। ফলে ওই স্থানের দৃশ্যমান ক্ষতি হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close