ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

ন্যাটো ভেটোর ফাঁদে ইউক্রেন
প্রকাশ: বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২, ১:৩১ পিএম  (ভিজিট : ৮৫৬)
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিপরীতে পশ্চিমা এবং ইউরোপের দেশগুলোর প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তা বারবার চেয়েও পাচ্ছে না ইউক্রেন। আমেরিকা-ইউরোপের সামরিক জোটগুলো উত্তেজনা শুরুর আগে অনেক কথা বললেও যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভূ-রাজনীতিতে অস্থিরতার এ সময়ে ভারতও রাশিয়া থেকে তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে, যা তাদের মিত্রদেশ আমেরিকাকে হতবাক করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গোটাবিশ্বই যেন দুভাগে বিভক্ত হচ্ছে। আর ইউক্রেন তার মিত্রদের আশ্বাসের ফাঁদে পড়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক সোমবার রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, চলমান ইউক্রেন সঙ্কটে গোটা বিশ্ব এখন দুভাগে বিভক্ত, এটা সত্য। কিন্তু বৈশি^ক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণটা পশ্চিমাদের হাতে। বিবিসি, সিএনএনসহ বিশে^র গণমাধ্যম যেমন করে পশ্চিমারা নিয়ন্ত্রণ করছে, বাকি ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সে কারণে এ সময়ে গণমাধ্যমে সঠিক খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যাই ঘটুক না কেন আজ বা কাল ইউক্রেনকে রাশিয়া দখল করবেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে, ন্যাটো আর সম্প্রসারণ হচ্ছে না। কেননা এই যুদ্ধের আগে ন্যাটো অনেক হুমকি দিয়েছে, অনেক কথা বলেছে; কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি ন্যাটো কিছুই করতে পারছে না। তাই এই জোট সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নেই। দ্বিতীয়ত, ভারত রাশিয়া থেকে রুপিতে তেল কিনছে, চীন তাদের মুদ্রা দিয়ে রাশিয়া থেকে তেল কেনার ঘোষণা দিয়েছে, সৌদিরাও এই ফর্মুলায় তেল বিক্রির কথা জানিয়েছে। তার মানে পেট্রোডলারের প্রভাব কমবে। আর পেট্রোডলারের প্রভাব কমলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা বিপদে পড়বে। পেট্রোডলারের প্রভাব কমানোর জন্য সবার আগে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সাদ্দাম তখন বলেছিলেন, আমি ইউরো দিয়ে তেল বেচব, কেউ কিনতে চাইলে ইউরো দিয়ে কিনতে হবে। তারপর সাদ্দামের কী অবস্থা হয়েছে তা বিশ্ব জানে। একই কাজ করতে চেয়েছিলেন লিবিয়ার গাদ্দাফি। কিন্তু তিনিও টিকতে পারেননি। আজকে ২০২২ সালে এসে একই কাজ করছে রাশিয়া, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিরাট চাপে ফেলবে। সামনে বাইডেন প্রশাসনের অন্তর্বর্তী নির্বাচন (মিডটার্ম নির্বাচন) আছে। এরই মধ্যে সেখানে গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাই বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের চাপে পড়বে।

চলমান উত্তেজনায় চীন-রাশিয়া সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এক্ষেত্রে উইনার হবে চীন। এ ঘটনায় অর্থনৈতিক খাতে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। চীনের উত্থান এখন অনেক বেশি হবে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বৈশি^ক ক্ষমতা পশ্চিম থেকে পুবে আসতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিসের প্রেসিডেন্ট আ ন ম মুনিরুজ্জামান সোমবার রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গোটাবিশ্ব কীভাবে বিভক্ত হচ্ছে তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। নতুন যে স্নায়ুযুদ্ধের চিহ্ন আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম তা এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখানে একদিকে যাচ্ছে গণতন্ত্র, অন্যদিকে যাচ্ছে অগণতান্ত্রিক দেশ। বিভক্তিটা গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে। যে স্নায়ুযুদ্ধ এবার হবে, যাতে ২ দশমিক ০ বলা যায়, সেখানে আইডিওলজি থেকে বিভক্তিটা হচ্ছে না। বিভক্তিটা হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার যে পদ্ধতি তার ওপর ভিত্তি করে। এই বিভাজনটা আগামী দিনগুলোতে আরও প্রকট হবে। যুদ্ধ যত প্রলম্বিত হবে, সমস্যা তত বাড়বে। কারণ যে দুটি ভাগে বিভক্তি হচ্ছে, সেই দুটি ভাগই তাদের দল ভারী করার জন্য বাকিদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা চালাবে। এখনও অনেক দেশ আছে যারা পুরোপুরি কোনো পক্ষে চলে যায়নি, তাদেরও চলে যাওয়ার পথ আবার প্রশস্ত হবে।

মুনিরুজ্জামান বলেন, ভারত-চীন রাশিয়া থেকে তেল কেনার কথা জানিয়েছে। জার্মানি জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে চলমান গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এখানে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ এবং কোয়াডের (যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-অস্ট্রেলিয়া-জাপান চার দেশের সামরিক জোট) সদস্য। কিন্তু চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত যে নীতিমালা দিচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো মেনে নিতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, চলমান অস্থিতিশীলতায় ভারতের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। চীন যে রাশিয়া থেকে তেল কিনবে এতে কেউ আশ্চর্য হচ্ছে না। আশ্চর্য হচ্ছে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে এবং এই সময়ে ভারতের অবস্থান নিয়ে। এখানে একটা নতুন মোড় দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র কতটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তা আগামীতে পরিষ্কার হবে। 

সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা আরও বলেন, একই সময়ে সুইফটের (আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক) ওপর যে চ্যালেঞ্জ এসেছে তাতেও নতুন মোড় আসতে পারে। সুইফটের বিকল্প হিসেবে চীন তাদের নতুন নেটওয়ার্ক কয়েক বছর আগেই স্থাপন করেছে। চীনের এই নেটওয়ার্কের সদস্যসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অনেক দেশই এক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কারণ তারা অর্থ স্থানান্তরের জন্য এখানে বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, ডলার স্থানান্তরের কোনো বিকল্প কিন্তু এখনও আসেনি। দেখা যাচ্ছে, চীনের বিকল্প ব্যবস্থাগুলো তাদের পথকে সুগম করছে। এটা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেমন প্রভাব ফেলবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর তেমন কোনো চাপ আসেনি। আরও দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বিশে^ আইনভিত্তিক যে শাসনব্যবস্থা আছে তার ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আইনের শাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি হলে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। চীনের কাছ থেকে এই আইনভিত্তিক শাসনব্যবস্থার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকদিন থেকেই পরিবর্তনের চাপ এসেছে। সেই জায়গাগুলোতে চীন নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তবে চীন কিন্তু আমূল পরিবর্তনে যাচ্ছে না। কারণ আন্তর্জাতিক আইনব্যবস্থা থেকে চীন নিজেও লাভবান হচ্ছে। যেমন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে চীন সুবিধা পাচ্ছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা থেকে তারা লাভবান হচ্ছে। এসব জায়গাতে চীন পরিবর্তন না চাইলেও কিছু কিছু জায়গায় তারা পরিবর্তন চায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন আবার নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

/এমএইচ/




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close