ই-পেপার মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪

১৯ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩, ৮:৪৪ পিএম  (ভিজিট : ১০৮৬)
গত এক মাসে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে কেজিপ্রতি দাম ঠেকেছিল ১০০ টাকা। দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৫ জুন থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির খবরেই পাইকারি বাজারে কেজিতে দাম কমে যায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। খুচরা বাজারেও কেজিতে ২০ টাকা করে কমলেও এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামেই। বিশেষ করে ভারত থেকে যে পেঁয়াজের শুল্কসহ আমদানি মূল্য পড়ছে ১৯ টাকা, ভারতীয় সেই পেঁয়াজও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। অথচ আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারিতে ২২ থেকে ২৩ টাকা এবং খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকার বেশি হবার কথা না।

অথচ এ দামে দেশের কোনো বাজারে মিলছে না পেঁয়াজ। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কম দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ এনে দ্বিগুণ-তিন গুন দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর ভোক্তাদের অভিযোগ, কম দামে পেঁয়াজ কেনা থেকে বঞ্চিত করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোক্তার ভাষ্য, অবিলম্বে পেঁয়াজের বাজারে জোরালো অভিযান চালিয়ে সরকার পেঁয়াজের দাম ক্রেতার নাগালে আনার ব্যবস্থা করুক।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে যেসব পেঁয়াজ দেশে আসছে তার আমদানি মূল্য পড়ছে প্রতি কেজিতে ১৪ থেকে ১৭ টাকা। তাই পরিবহণ খরচসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ করলেও এসব পেঁয়াজ ভোক্তার কাছে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ টাকার বেশি বিক্রি করার কথা না।

জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির পর যেসব পেঁয়াজ দেশে এসেছে তার মূল্য গড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকায়। আমদানি অনুমতি দেবার পর প্রথম দিন তিনটি স্থলবন্দর-দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়। তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। গড়ে দাম পড়ে কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা। প্রতি কেজিতে করভার গড়ে সাড়ে ৩ টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৯ টাকা। সুতরাং এক কেজি আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এখন খুচরা বাজারে ২৫ টাকার বেশি হবার কথা না। অথচ এই দামে দেশের কোনো বাজারে মিলছে না ভারতীয় পেঁয়াজ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কল্যাণপুর নতুন বাজার, কারওয়ান বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ ১৯ টাকার এক কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫১ টাকা বেশিতে।
এ বিষয়ে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘কম দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লুটপাট করছে। যে পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ভোক্তার পাবার কথা, সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। আমি মনে করি পেঁয়াজের বাজারে সরকারি মনিটরিং জোরদার করা দরকার। প্রয়োজনে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যান্য পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি।

এদিকে পেঁয়াজের বাজারের মতোই প্রায় সব ধরণের পণ্যই অস্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, চালের দাম আগের মতোই চড়া। সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে মাছের দাম বেড়েছে ঢাকার বাজারে। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মাছের সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে।

অন্যদিকে মুদি বাজারে ক্রেতার কাছে চিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাজারে কোথাও কোথাও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বাজারগুলোতে খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনি বিক্রি করছেন ১৩৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মুদি দোকানে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যেখানে সরকার খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

গত রমজানে ২৫০ টাকায় ঠেকেছিল বয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর তা কিছুটা কমে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। শুক্রবার অনেক বাজারে তার চেয়েও ১০ টাকা কমে, অর্থাৎ ২১০-২২০ টাকা দরে বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। বয়লারের সঙ্গে সোনালি জাতের মুরগির দামও কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ৩০০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামে তেমন কমেনি। বড় বাজারে ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাসের দামও বেড়েছে। এ দুই ধরনের মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ মাছের দামও গত সপ্তাহের চেয়ে এখন কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া পাবদা, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের যে দাম, তা শুধু নিম্নবিত্ত নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম ২০-৩০ টাকা কমেছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ টাকা, প্রতি কেজি পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, টমেটো কেজি ৬০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া (পিস) ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close