ই-পেপার শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪
শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন
ইভিএমে আস্থা তৈরিতে মরিয়া নির্বাচন কমিশন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম আপডেট: ৩১.১২.২০১৯ ১২:৫১ এএম  (ভিজিট : ৪০৮)
আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে এবার ভোটগ্রহণ হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। জাতীয় নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএমের ব্যবহার হলেও প্রার্থী এবং ভোটারদের আস্থা অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ হয় ভোটগ্রহণের এ আধুনিক ডিভাইসটি। তাই সিটি নির্বাচনে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অনেকটাই মরিয়া নির্বাচন কমিশন। কমিশন দাবি করছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ থাকবে না। পর্যায়ক্রমে জাতীয় নির্বাচনেও পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করা হবে এই ডিভাইসটি। তবে এখনও অনেক এলাকার ভোটার ইভিএম মেশিনই চোখে দেখেননি বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে এর পরীক্ষামূলক ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। তফসিল মোতাবেক প্রতিটি কেন্দ্রেই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে ইভিএমের মাধ্যমে।
এ লক্ষ্যে গত শনিবার থেকে নির্বাচন ভবন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএম পাঠানো শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভোটের মাধ্যমে জনগণ এবং প্রার্থীদের আস্থা অর্জনে নির্বাচনের আগেই ইভিএম প্রদর্শনীর আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য উত্তরের জন্য ৮টি ভেন্যু বা কেন্দ্রে ইভিএম রাখা হবে। দক্ষিণের জন্য ১১টি ভেন্যুতে রাখা হবে। ভোটগ্রহণের আগে থেকে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে আমরা ভোটারদের দেখাব কীভাবে ভোট দিতে হয়। তবে সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ইভিএমের প্রদর্শনী। প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে এসে ইভিএম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যই এ প্রদর্শনী জানিয়ে মো. আবুল কাসেম বলেন, ইভিএম মেশিনের মনিটরে আসা বিভিন্ন নির্দেশনা সম্পর্কে প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি প্রার্থীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে এখানে ইভিএম রাখা হয়েছে।
ঢাকা উত্তরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল ইসলাম শাহেদ বলছিলেন, কাগজের ভোটে কারচুপির সুযোগ থাকলেও ইভিএমএ সে সুযোগ থাকছে না। তবে তিনি বলেন, আঙুলের ছাপ না মিললে যদি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট ম্যানুয়ালি নেওয়ার ক্ষমতার বিষয়টা থাকে তাহলে কারচুপির সুযোগ থাকবে।
তবে জাতীয় নির্বাচনে কিছু অংশে ইভিএমের ব্যবহার হলেও অনেক ভোটারেরই নেই এর ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। রাজধানীর মগবাজার এলাকার ষাটোর্ধ্ব সোহানুর রহমান বলেন, ‘ইভিএমের ব্যাপারে শুনছিই খালি। চোক্ষে দেহি নাই।’ একই কথা বলেন, খিলগাঁও কলেজের শিক্ষিকা প্রিয়াশা শর্মা। তিনি বলেন, ‘এই মেশিনের কথা শুনেছি। কিন্তু দেখিনি এখন পর্যন্ত।’
ইভিএমের নিরাপত্তায় থাকছে ৫ হাজার ২৮০ জন সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরি গত রোববার নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটির প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই সেনা সদস্য থাকবেন। তারাই ইভিএম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ইভিএম প্রস্তুত রাখা হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য দুজন করে সেনা সদস্য থাকবেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে যত মত
নির্বাচন কমিশনের মতে, ইভিএম ব্যবহারের ফলে ব্যালট পেপার ছাপানোর খরচ থেকে পরিবহনের খরচ, সবই কমেছে। ভোট গণনার সময়ে কম লোকে, কম সময়ে, কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয় একটি মেশিন দিয়ে বেশ কয়েকটি নির্বাচন করা সম্ভব। শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রামিং করাতে হয়। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে ভোট হলে কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হয় না। ভোটের তথ্য মেশিনে দীর্ঘ সময় অবিকৃত অবস্থায় থাকে। একজন ভোটার ভোট দেওয়ার পরে ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট আপনা আপনি অকার্যকর হয়ে যায়। প্রিসাইডিং অফিসার এ সময়ে সুইচ অন করলেও সেটি চালু হয় না। ফলে একজন ভোটার একাধিক ভোট দিতে পারে না। এ ছাড়া কোনো কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে ভোটকর্মীরা কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারে না। আবার প্রতি মিনিটে ৫টির বেশি ভোট দেওয়াও যায় না।
তবে এর বিপক্ষের অভিযোগগুলোই বেশি শক্তিশালী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এমন প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই আপনা থেকেই নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত ২০০-৩০০ ভোট যুক্ত হবে তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়া নাকি সম্ভব। শুধু তাই নয় অনেকের অভিযোগ, মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম বদলের সুযোগ নিয়ে এমনটা নাকি করা যায়, যাতে কোনো কেন্দ্রে বাকি প্রার্থীদের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পড়ার পরে যেকোনো বাটনে চাপ দিলেই অতিরিক্ত ভোট দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে। এ ছাড়াও এ ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় আলাদা করা যায়। অনেকের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা ভোটকেন্দ্র দখলের পরে গোপনে সরবরাহ করা শুধু কন্ট্রোল ইউনিট বদলে দিতে পারে। আর সেই নতুন কন্ট্রোল ইউনিটে যদি আগে থেকে কারও পক্ষে ভোট দেওয়া থাকে তবে ফল বদলে দেওয়া যায়। বিরোধীরা এমনও অভিযোগ তোলেন, গণনার আগে মেশিন বদলে দেওয়া হতে পারে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close