গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বলেছে, সরকারি সংস্থা বিবিএস মূল্যস্ফীতির যে হার উল্লেখ করে তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাস্তবে মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যদি নিজে বাজারে যেতেন তা হলে মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব করতে পারতেন। সব ধরনের পণ্যমূল্য এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এখন শুধু ডাল-ভাত খেতেই মাসে ৮ হাজার টাকারও বেশি লাগে। আর ২৯ হাজার টাকারও বেশি আয় করা পরিবারের সদস্যরা এখন মাসের এক দিন মাছ-মাংস খেতে পারে না। এ অবস্থায় সব ধরনের শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করার এখনই সময়।
সিপিডি জানায়, ২৯ হাজার ২০৬ টাকা আয় করা চারজনের একটি পরিবার মাসে এক দিনও মাছ-মাংস খেতে পারে না। এর মধ্যে সব ধরনের মাছ, গরু-খাসির মাংস এবং মুরগির মাংস রয়েছে। চড়া উচ্চমূল্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। চার সদস্যের একটি পরিবার সব ধরনের স্বাভাবিক খাদ্য, খাদ্যবহিভর্‚ত পণ্য ক্রয়, বাসাভাড়া ও শিক্ষাব্যয়সহ সব খরচ ধরলে মাসে আয় লাগবে ৪২ হাজার ৫৪৮ টাকা। কিন্তু মাছ-মাংস ছেড়ে খেলে এবং চিকিৎসা ব্যয় না মেটালে মাসে ২৯ হাজার ২০৬ টাকা লাগবে। নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার এখন মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সিপিডির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই সঙ্কটে এখন সময় এসেছে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় করা।
রোববার ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২১-২২ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষ থেকে দেশের অর্থনীতির চলমান বিভিন্ন সঙ্কটের দিক তুলে ধরা হয়।
সিপিডির ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ও সঙ্কট থেকে উত্তরণ নিয়ে কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অন্যরা। চলমান পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলেও মনে করে সিপিডি।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বর্তমান চালের বাজারে যে সরবরাহ তাতে আমার মনে হয় চালের এত উচ্চমূল্য হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিগত অর্থবছরের চেয়ে এ বছর চালের আমদানি ৬০ হাজার টন বেশি হয়েছে। মজুদ ১২ লাখ মেট্রিক টন সেটিও যথেষ্ট মাত্রায় ভালো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠেছে। এটা কিন্তু শুধু চালের বাজার নয়, চালের বাজার, তেলের বাজার, ডলারের বাজার সব বাজারেই জ্বালানি তেলের বাজার সবখানেই একটা দুর্বলতা দেখছি। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার বাজার ব্যবস্থাপনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে হচ্ছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর উৎস কিছু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে মূল্যস্ফীতির চাপ, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবে ঘাটতি, বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ। এর ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তা অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হার উল্লেখ করা হয়, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি হিসাব বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন সিডিপির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আপনারাই বলেন, বিবিএস যে মূল্যস্ফীতির হিসাব দিচ্ছে ৬ শতাংশ, ৫ শতাংশ তা কী সঠিক?। আপনারাও তো বাজারে যান। আমার মনে হয় দেশের নীতিনির্ধারকরা বাজারে যান না গেলেও তারা হয়তো বাজারের জিনিসপত্রের দামের হিসাব রাখেন না।
/এমএইচ/