ই-পেপার শনিবার ১৮ মে ২০২৪
শনিবার ১৮ মে ২০২৪

প্রকল্প সংশোধনেই পদ্মা সেতুর সমান খরচ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২, ৭:১৬ এএম  (ভিজিট : ৩৮৩)
নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে সংশোধিত প্রকল্পের সংখ্যা। প্রতি জাতীয় পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাতেই দেখা যায় তিনটি থেকে সর্বোচ্চ ছয়টি সংশোধিত প্রকল্প সময় ও ব্যয় বাড়াতে পাস হচ্ছে। এ কারণে অনেক নতুন প্রকল্প এডিপিতে জায়গা পাচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত প্রকল্পে যে পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে তা দিয়ে আরও একটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। 

বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ ইন শিওরিং গুড ভ্যালু ফর মানি’ শীর্ষক এক সংলাপে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধে উপস্থাপনে বলেন, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১টি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো সংশোধনের ফলে টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, পদ্মা সেতুতে যে টাকা লেগেছে প্রায় তার সমান। পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বারবার সংশোধন ও সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার ফলেই এ টাকা বেড়েছে। 

তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দেখি বারবার প্রকল্প সংশোধন হয়। ফলে সময় বাড়ানো হয়। সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। আমরা মেগা প্রকল্প ও ছোটখাটো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ২০২২-২৩ সালের যে বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে, সেখানে দেখেছি ১ হাজার ৩৫৬টি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স বাদ দিলে ১ হাজার ২৫০টি প্রকল্প থাকে। এগুলো বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামো, সড়ক, সেতুসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ। এসবে লাখ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। যদি সুশাসনের সঙ্গে সময়মতো বাস্তবায়ন করা যায়, সাশ্রয়ীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে দেশের জন্য মঙ্গল। এমনটি হলে আমরা আরও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারব। 

তিনি বলেন, আমাদের যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা দিয়ে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারব। আমরা যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি, তা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমরা দেখছি মেগা প্রকল্প সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খবরদারি করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, ফলে আমরা একটা ইতিবাচক সুফল পাচ্ছি। বিষয়টি অন্যান্য প্রকল্পেও যদি কাজে লাগাতে পারি, তা হলে ১ হাজার ২৫০টি অবকাঠামো ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রকল্প ২০২২-২৩ সালে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারব। প্রকল্প নিয়ে একটা কাঠামো করা যায় কি না, তা হলে ভালোভাবে কাজ করতে পারব। আমাদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। 

মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ভালোভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রাইভেট খাত আরও আকর্ষণীয় হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি সড়ক যখন হয়, একটি সেতু যখন হয়, তাকে ঘিরে যা বিনিয়োগ হয় তা অবর্ণনীয়। এখান থেকে সরকার কর ও রাজস্ব আদায় করে। 


সংলাপে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু কিছু বিষয়ে দুঃখ পাই। তার মধ্যে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) একটি বিষয়। পিডি প্রকল্পের জন্য খুবই অপরিহার্য, কিন্তু তাদের আমরা ম্যানেজ করতে পারছি না। তারা কাজের এলাকায় থাকতে চান না। প্রকল্প পঞ্চগড়ে অথচ পরিচালক বাস করেন ঢাকায়। প্রকল্প পরিচালকদের ঢাকায় আসতে হবে বরাদ্দসহ কিছু বিষয়ের জন্য, কিন্তু সবসময় থাকা যাবে না। এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তিনি বলেন, আমি আমলাতন্ত্রের মধ্যম পর্যায়ে ছিলাম। তখন দেখেছি কেউ কাজের কাছে থাকতে চায় না। সবাই কাজ থেকে দূরে থাকতে চায়। অনেককে কাজের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। আপনারা উপজেলা পর্যায়ে যান, ইউনিয়ন পর্যায়ে যান- কেউ কাজের জায়গায় থাকে না। বিভাগীয় পর্যায়ে গেলেও কাউকে পাই না। এরা কারা? এদের খুঁজে বের করেত হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অনেক বিধি অপ্রয়োজনীয়। ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও সামরিক শাসকরা এসব করেছেন, যার এখন বাস্তবতা নেই। কিন্তু অনেক দুষ্ট আমলা এসব বিধান চাতুরীর সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে এসব বদলানোর, তা সত্ত্বেও এসব পরিবর্তন করা যাচ্ছে না, নানা প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হয়। তবে আইনকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ সময় সরকারদলীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, এগুলোকে চুরি বলব না, তবে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে দুর্নীতির বিষয় রেখেঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই বলেই তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, অনেক প্রকল্পের পরিচালকরা নতুন গাড়ি কিনছেন, যদিও তিনি এমনিতে গাড়ি পান। এমনকি প্রকল্প এলাকায় তাকে প্রতিদিন যেতেও হয় না। ফলে যেখানে তেলের খরচ নিলেই যথেষ্ট, সেখানে নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। এসব বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সংলাপে সংসদ সদস্য এনামুল হক বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় মানুষের যাপিত জীবনের পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এখন প্রকল্প হচ্ছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। ফলে প্রকল্পের আগে বোঝা যায় না এর ফল কী হবে বরং প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তা বোঝা যায়। কাঠামো পরিকল্পনা থাকলে এসব সমস্যা হতো না। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে এটা করা খুব কঠিন নয় বলেই তিনি মনে করেন।

/এসকে


আরও সংবাদ   বিষয়:  পদ্মা সেতু  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close