ই-পেপার বুধবার ১ মে ২০২৪
বুধবার ১ মে ২০২৪

স্নিগ্ধা সুমিষ্ট ও টুনটুনি
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ১৫৯)
ঘরের সামনেই বেশ খোলামেলা উঠোন, সেখানে খেলা করে ছোট্ট স্নিগ্ধা ও সুমিষ্ট। দুই ভাইবোন আনন্দে সকাল-বিকাল খেলা করে, আবার খেলনাপাতির দখল নিয়ে ঝগড়াটাও হরহামেশা লেগেই থাকে। এটা যেন নিত্যদিনের রুটিন। এ নিয়ে দুজনেরই মায়ের কাছে নালিশের অন্ত নেই। আমারটা নিলো, আমাকে মারলÑ এই জাতীয় শব্দ মাকে হরহামেশাই শুনতে হয়। ভাইবোন এই ঝগড়া তো এই ভাব। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হতেও সময় নেয় না, ফের ভাব হতেও দেরি হয় না।
উঠোনের চারদিকে ওদের কাকা শিমুল নানান প্রজাতির ফুলের চারা লাগিয়েছে। বেলি, চাঁপা, গাঁদা, অপরাজিতা ইত্যাদি। নীল অপরাজিতা ঈশান কোণে বেশ বড়সড় এরিয়ার রাজত্ব নিয়ে নিয়েছে। ভোরে যখন নীল অপরাজিতার কলি ফুটে ফুল হয়, তখন দেখতে যেন অর্পূব মায়া ঝরে। দাদি যখন ফুল তুলতে যায়, পিছে পিছে স্নিগ্ধা-সুমিষ্টও প্রতিযোগিতায় নামে। প্রতিযোগিতা মানে এখানেও ঝগড়া। কে আগে কতটা ফুল নিতে পারে। অপরাজিতা ফুলগাছটা লতা জাতীয়। বাড়ির ঘেরা দেওয়ালের ওপর বাঁশের কঞ্চি লাগিয়ে দেওয়াতে চার-পাঁচ ফুট ওপরেই বেশিরভাগ ফুল। নিচের ফুলগুলো কোনোরকমে তুলতে পারলেও ওপরেরগুলো থেকে যায়। রবির কিরণে শিশির মাখা ফুলে যেন মুক্তো ঝরে। তখন ফুলে ভোমরা আসে, লেজ দুলিয়ে নাচে ছোট্ট টুনটুনি। ফুল-পাখি দেখতে ভাইবোন তখন এক হয়ে যায়। যখন কয়েকটি টুনটুনি ফুলে ফুলে ঘোরে, গান করে, তখন দুজনের আনন্দ দেখে কে? টুনটুনিও যেন এদের ভাব বোঝে। ভাইবোন চেঁচামেচি করলে পাখিরাও যেন আনন্দ পায়। এমনি করে ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের ভাব হয়ে গেল। টুনটুনিরা সারা দিন এখানেই থাকে কোনো না কোনোটা।
স্নিগ্ধা সকালে স্কুলে গেলেও সুমিষ্টর এখনও স্কুলে যাবার বয়স হয়নি। কথা বলাটা শিখছে ধীরে ধীরে। যেটুকু বলতে পারে, তা নিয়ে ভাইবোনের বোঝাপড়াটা যেন চলে। স্নিগ্ধা সকালে স্কুলে চলে গেলে সুমিষ্ট বড়ই একা হয়ে যায়। ওই সময় বোনের জন্য বড়ই আকুলতা ঝরে সুমিষ্টের মনে। যদিও মনের ভাবটা বুঝিয়ে বলতে পারে না। ফুলগাছে পাখি দেখলে বোনকে ডাকে চিৎকার করে। দৌড়ে গিয়ে মাকে বলে, দিদি কখন আসবে? পাখি আসছে ফুলগাছে, নাচে লেজ দুলিয়ে, গান করে আনন্দে। দুটো টুনটুনি অনেকক্ষণ ধরে ফুলগাছে খেলছে আর মধু খেতে ব্যস্ত। সুমিষ্ট পাখি দুটোকে ডাকেÑ আয় আয়, কলা দেব, বিস্কুট দেব, মুড়ি দেব, কোলে কোলে রাখব। পাখিরা কি বোঝে সুমিষ্টের আকুলতা? তারা তো আপনমনে এডাল থেকে ওডাল ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নেচে নেচে গান করছে। ছেলের এমন কাণ্ড দেখে মা এসে সুমিষ্টকে কোলে নেয়। কোলে যাওয়ার ইচ্ছে নেই সুমিষ্টের। মাকে বলে সে, মা এই পাখিগুলোকে আসতে বলো না, ওদের বেশি বেশি করে খানা দেব। পাখিদের ধরে দাও না। না হয় আমি ভাত খাব না । মা তো পড়ল মহা মুশকিলে। এত ছোট ছোট পাখি ধরব কী করে? যদি শিমুল থাকত তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারত।
এমন সময় স্নিগ্ধা স্কুল থেকে এসে হাজির। এবার দিদিকে বলে সুমিষ্ট, পাখিগুলোকে ধরে আমি আর তুমি একটা একটা করে রাখব। স্নিগ্ধাও ভাইয়ের কথায় রাজি। সেও বলে, মা পাখিগুলো ধরে দাও না। মা বলে, আমি পারব না। শুনে তো সুমিষ্ট কান্না জুড়ে দিল। এখন তাকে শান্ত করাই মুশকিল। খাবারদাবারের কথা ভুলে গেল দুজনেই। ফুলগাছের নিচে দাঁড়িয়ে রইল দুজন। কী করবে মা? ভাবতে থাকে কীভাবে শান্ত করা যায় ছেলেমেয়েদের। বলল, তোমাদের কাকা আসলে বলব ধরে দিতে।
রাতে শিমুল বাড়িতে আসতেই দুই ভাইবোন তাকে গিয়ে বলে, ফুলগাছে রোজ রোজ ছোট্ট টুনটুনি পাখি আসে, ওগুলো ধরে দিতে হবে।
রাতে কীভাবে পাখি ধরব? কাল চেষ্টা করে দেখব।
না, মা বলেছে পাখিরা রাতে দেখে না।
রাতে তো আমিও দেখি না, কীভাবে ধরব এখন? আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল শহরে গেলে দুটো টিয়েপাখি কিনে আনব তোমাদের জন্য। টিয়েপাখি তো টুনটুনি পাখির চেয়ে বড়, আর টিয়েপাখি কথা বলতে পারে।
কাকার আশ্বাস শুনে স্নিগ্ধা ও সুমিষ্ট তো মহা খুশি। কাকা টিয়েপাখি কিনে আনবে, এই আনন্দে দুজনেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close