ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

উচ্ছেদ অভিযান প্রশংসার দাবিদার
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ২৮৮)
চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশÑ এখন এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই। সব মিলিয়ে আমরা যেন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়ে পড়ছিলাম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যৌথ উদ্যোগে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে সারা দেশে নদী-খাল দখলমুক্ত করার অভিযান।
সারা দেশে একযোগে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের অংশ হিসেবে চালানো হয় ল²ীপুর, হবিগঞ্জ, ভোলা, দিনাজপুর, গাজীপুর ও পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান। দেশের প্রাকৃতিক জলাধার বিশেষ করে নদী-খাল, হাওর-বাঁওড় রক্ষার এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। বিশে^র যেসব দেশে মিঠা পানির প্রাচুর্য রয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সামনের কাতারে। কিন্তু নদ-নদী ও প্রাকৃতিক জলাধারের প্রতি সীমাহীন অবহেলার কারণে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মিঠা পানির উৎস অস্তিত্ব হারিয়েছে। নদ-নদী, খাল অপদখলের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী নদ-নদী, খালসহ প্রাকৃতিক জলাধার সুরক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন এবং অপদখল উচ্ছেদের নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের সব নদী-খাল পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ। অভিযানের শুরুতেই সিলেটের জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নদীতীরের শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জকিগঞ্জে সুরমা নদীর তীর দখল করে নির্মিত ৬০টি ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর নির্মিত ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজ থেকে কাচারিঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে এবং সেগুলো ধারাবাহিক অভিযানে দখলমুক্ত করার কথা জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা। কুমিল্লার গোমতী পাড়ের ১৩৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বগুড়ায় করতোয়া নদীর পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ অভিযানে সোমবার ১৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ পাম্প হাউস সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, ল²ীপুর, দিনাজপুর, রংপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর মাদারীপুরসহ সারা দেশে চলছে এই যৌথ অভিযান। নদ-নদী, খাল-বিল দখল করা আমাদের দেশের একশ্রেণির প্রভাবশালীর মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই লুটেরাদের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল। আমাদের বিশ^াস, শুধু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ নয়, কেউ যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দখলদারিত্বের সাহস না দেখায় সে ব্যাপারেও প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার ওপর প্রথম আঘাত আসে ইংরেজ আমলের ভুল নদী ব্যবস্থাপনায়। এরপর ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের নামে ক্ষতিকর বাঁধ, আশির দশকে বিশ^ব্যাংকের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগুলোর ভালোর বদলে মন্দই করেছে বেশি। গত দুই দশকে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্য নদী দখল ও দূষণ ঘটেছে ব্যাপক হারে। দেশে দীর্ঘদিন নদী দখলে হুড়োহুড়ি চলছে। অন্য দেশের মানুষ যেখানে দিন দিন সভ্য হচ্ছে, নদী রক্ষায় উদ্যোগী হচ্ছে সেখানে আমরা ক্রমাগত নদী দখল করছি। দখলে, দূষণে সবাই মিলে নদীগুলোকে খালে রূপান্তরিত করতে যেন উঠে পড়ে লেগেছি। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নদ-নদী দখলের বিরুদ্ধে তিনি তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণার মাধ্যমে নদ-নদীগুলোকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। যা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবিদার। নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হলে, দখল-দূষণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হলে আমাদের নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাবে, আমরাও প্রাণ পাব। নদী রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের নদী তীরবর্তী পৌরসভাগুলোকে সচেতন হতে হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। খেয়াল রাখতে হবে, কোনো বর্জ্য যেন নদীতে ফেলা না হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর সবার দায়িত্ব নদী রক্ষা করা। সেই দায়িত্ব যেন আমরা কেউ অবহেলা না করি। আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের
কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই নদী রক্ষা না করলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না। এ জন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদ-নদী বাঁচাতে খুব দ্রæত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান
     রাজউক, সদস্য এফবিসিসিআই




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close