ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

আশা জাগানিয়া ওষুধ শিল্প
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম  (ভিজিট : ৫৩০)
বাংলাদেশ এখন বিশে^র ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ। এ দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের বড় প্রমাণ হচ্ছে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন। এর বড় দৃষ্টান্ত ওষুধ শিল্প। যেখানে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি শিল্প আমাদের পোশাক শিল্পে বিশে^র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানিকারক দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য হওয়া সত্তে¡ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শিল্পটি বিপন্ন হতে চলছে। শত বর্ষের ঐতিহ্য সোনালি আঁশ পাটের সোনালি দিন বহু আগেই ফুরিয়ে গেছে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য চিংড়ি আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। টানা এর রফতানি কমেছে। সেখানে ওষুধ শিল্প যেন এক টুকরো আশার আলো। ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে অগ্রসর ও অন্যতম উন্নত একটি শিল্প। এটি আমাদের দেশের সরকারি কোষাগারে ২য় সর্বোচ্চ অবদান রাখে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস-এর তথ্যানুযায়ী ওষুধ শিল্প ২০১৬-১৭ সালে জিডিপিতে ১.৮৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প বিগত চার দশকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে অভ্যন্তরীণভাবে ও সারা বিশে^।
বর্তমানে আমাদের ওষুধ শিল্পের বাজার প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। গত বছর ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ১৯৮২ সালে ছিল ১৭২ কোটি টাকা। এই শিল্পের ভেতরের বিজ্ঞজনেরা অনুমান করছেন, এই ওষুধ শিল্পের বাজার আগামী পাঁচ বছরে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি নতুন রফতানি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প বিগত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে
প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বিগত (২০১৫-১৯) পাঁচ বছর আমাদের দেশে ওষুধ শিল্পের যৌগিক বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬.৭১ শতাংশ এবং এটা ২০১৪-১৭ এই ৩ বছর ছিল ২১ শতাংশ। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই শিল্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধির পাশাপাশি রফতানিতে বড় অবদান রাখবে এবং এই ওষুধ পণ্যের রফতানির বাজার ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত ১৪.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই শিল্প স্ব-গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও আমাদের দেশের ওষুধ এবং এর কাঁচামাল বিদেশে ১৫০টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। বিদেশের বাজারে আমাদের দেশের ওষুধের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওষুধ রফতানি করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত অর্থবছর ছিল ১০৩ মিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ২৬ শতাংশ এবং এই রফতানির বাজার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৭২ মিলিয়ন ডলার।
আমাদের দেশে ছোটবড় ২৫৭টিরও বেশি ওষুধের কারখানা রয়েছে, যা আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭-৯৮ শতাংশ পূরণ করে এবং বাকি ২-৩ শতাংশ অতি উচ্চমানের বিশেষায়িত ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের ক্রমান্বয়ে বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা আমাদের ভবিষ্যতের রফতানি বাজারই হবে ওষুধ শিল্পের মূল চালিকা শক্তি এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির একমাত্র নিয়ামক। একটি দেশ যখন দারিদ্র থেকে সচ্ছলতার দিকে যায় তখন মানুষের মধ্যে রোগ হবার কিছু কারণ তৈরি হয়, যেমনÑ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, চাপযুক্ত নগরজীবন এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশকেও এমন রোগ সহ্য করতে হবে। সেই হিসাবে ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসার প্রসারে অবশ্যই অনেক বেশি মনোযোগ বাড়াতে হবে। উপরে উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য খুবই যুক্তিসঙ্গতভাবে আমাদের এই ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং উত্তরোত্তর বিকশিত হবে। আমাদের সরকারের উচিত সব প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া বিভিন্ন নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে, ওষুধের রফতানির বাজার বৃদ্ধির স্বার্থে, আমাদের কোম্পানিগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া। এই ওষুধ খাত থেকে সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে ওষুধ রফতানি করে ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব, যা আমাদের আরও বেশি জাতীয় কোষাগারে অবদান রাখার মাধ্যমে উচ্চ মধ্যবিত্ত আয়ের জাতিতে পরিণত হতে সহায়তা করবে। আমরা আশা করি, যারা নীতিনির্ধারণী মহলে আছেন তারা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন।
সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত ধরনের ওষুধ তৈরিতে বড় বাধা কাঁচামালের আমদানি নির্ভরতা। আমাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। সেই বাধা দূর করতে সরকার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াতে ২০০ একর জমিতে ৪২টি প্লট আকারে এপিআই পার্ক তৈরি করেছে। আরও একটি সুখবর হলো বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য উদারীকরণ ও অধিকতর ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এইও (অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর) সনদ পেয়েছে দেশের ৩টি ওষুধ কোম্পানি। বেক্সিমকো, স্কয়ার ও ইনসেপটা ফার্মাÑ এ তিন প্রতিষ্ঠানকে এই সনদ পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে আগামী ছয় মাসের জন্য। এই প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। যার ফলে ওষুধের আমদানি ও রফতানির প্রক্রিয়ার সময় কমে যাবে এবং এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এ শিল্পের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার পরিচয়। এই শিল্প খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এবং শক্ত ও টেকসই খাতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার খুবই আন্তরিক। যার প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আমাদের ওষুধ পণ্য ও এর কাঁচামালকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা। এক কথায় বলা যায়, ওষুধ শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল, দ্রæত বর্ধনশীল ও অবশ্য সম্ভাবনাময়ী একটি শিল্প।

 প্রাবন্ধিক





সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close