কদিন পরেই
মিতুর জন্মদিন। প্রতিবছর এই দিনটার জন্য সে উৎসুক হয়ে থাকে। সহপাঠীদের
দাওয়াত দেয়। বাসায় অনেক মেহমান আসে। সবাই চমৎকার সব গিফট দেয়। এসব পেয়ে
মিতুর মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। গিফট পেলে কার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে না, শুনি?
বরং মিতু মনে মনে বলে, ‘ইস, বছরে যদি দুবার করে জন্মদিন আসত, আমি বেশি বেশি
গিফট পেতাম!’
আজ পড়ার টেবিলে মিতুর একদম মন নেই। সে তো জন্মদিনের গিফট
নিয়ে ভাবছে। মিতুর আম্মু কিচেন রুম থেকে বুঝতে পারেন। ডেকে বলেন, ‘কী
ব্যাপার মিতু, পড়ছ না যে?’
‘আম্মু, পড়ছি তো।’
‘না, তুমি মোটেও পড়ছ না। তুমি কিছু একটা ভাবছ।’
‘হুম, ভাবছি। আর কদিন পরেই আমার জন্মদিন, আম্মু। ভাবছি, বেশি বেশি গিফট না নিয়ে যদি বড় একটা গিফট পেতাম, তবে বেশি মজা হতো।’
‘ও আচ্ছা। এই কথা। অনেক মেহমান, অনেক গিফট দেবেÑ এটাই স্বাভাবিক। এতে বড়-ছোটর কী আছে?’
‘না
আম্মু, তুমি একদম বুঝছ না। কেউ পুতুল দেয়, কেউ জামা দেয়, আবার কেউ বই দেয়।
এসব না দিয়ে যদি আমায় একটা সাইকেল কেউ দিত, তবে ভীষণ মজা হতো। সাইকেল
চালানোর খুব শখ আমার।’
মিতুর আম্মু ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। ও তো
ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এখন ক্লাস ফাইভে পড়ছে। ওর তো খেলনাপাতি আর পুতুল নিয়ে
খেলার সময় না এখন। এখন সময় খোলা মাঠে ছোটাছুটি ও দৌড়ানোর। তাই তিনি ভাবেন,
‘সত্যিই, এবার মিতুকে একটা সাইকেল গিফট করব। কিন্তু আগেই ওকে জানাব না।
সারপ্রাইজ দেব।’
মিতুর আম্মু ওর জন্য ব্যাংকে টাকা জমান অনেক দিন ধরেই।
সামনে জন্মদিন ভেবে সেটি তিনি মিতুর অগোচরে ভাঙেন। সব মিলিয়ে একটা সাইকেল
কেনার টাকা হয়ে যায়। অফিস থেকে মিতুর আব্বু মনির চৌধুরী আসতেই ওর আম্মু
তাকে বলেন, ‘শোনো, এই জমানো টাকা দিয়ে মিতুকে জন্মদিনে একটা সাইকেল গিফট
করব। তুমি আগেই ওকে জানাবে না। জন্মদিনের দিন তুমি সাইকেল এনে ওকে
সারপ্রাইজ দেবে।’
‘ঠিক আছে। তাই হবে।’
আজ মিতুর জন্মদিন। বাসা
ভর্তি মেহমান। ওর সহপাঠীরা এসে কুচকাওয়াজ করছে। মিতুর রুম চমৎকার করে
সাজানো হয়েছে। লাল-নীল-সবুজ বাতি জ¦লছে। টেবিলে জন্মদিনের বড় একটা কেক রাখা
আছে। পাশের একটা টেবিলে সবাই নানান রকম গিফট রাখছেন। মিতু এসব পেয়ে ক্ষণেই
আনন্দিত হচ্ছে, ক্ষণেই মনে মনে বলছেÑ ‘মনে হয়, বড় গিফট এবারও পাব না। কেউ
যদি আমাকে সাইকেল দিত!’
সময় যেতে থাকে। সবাই প্রস্তুত জন্মদিনের কেক
কাটার জন্য। হঠাৎ মিতুর মনটা খারাপ হয়। কেননা ওর বাবা এখনও অফিস থেকে
ফেরেননি। সে আম্মুকে জিগ্যেস করে, ‘আম্মু, আব্বু আজ অফিস থেকে ফিরতে দেরি
করছেন কেন? আজ আমার জন্মদিন আর আজই লেট করতে হলো!’
‘মনে হয়, যানজটে আটকে গেছে।’
যানজটের
কথা শুনে মিতুর মনটা আরেকটু খারাপ হয়। এই যানজটের কবলে পড়ে ওর মাঝেমধ্যে
স্কুলে পৌঁছতেও দেরি হয়। স্কুলগাড়িওয়ালা মামারও ভীষণ কষ্ট হয়। তার ইচ্ছে
হয় তখনÑ সে যদি মেয়র হতো, তবে এই শহরের যানজট দূর করত। আর তাই তো সে মনোযোগ
দিয়ে পড়াশোনা করছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে মিতুর আব্বু বড় একটা প্যাকেট নিয়ে
বাসায় হাজির হন। মোড়কে মোড়ানো বলে বোঝা যাচ্ছে না যে এর ভেতরে কী আছে।
মিতু কৌত‚হলী হয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করে, ‘আব্বু, তুমি কি আমার জন্য বড় গিফট
এনেছ?’
‘হুম আম্মু, শুধু বড় গিফট না। তোমার মনের আশা পূরণ করতে সাইকেল এনেছি।’
‘ওয়াও। কিন্তু তুমি কীভাবে জানলে যে আমি সাইকেল পেলে খুশি হব আজ?’
‘তোমার আম্মুর প্ল্যান ছিল এসব।’
‘ও আচ্ছা। লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করা হয়েছে তাহলে!’
জন্মদিনের
এত বড়ো সারপ্রাইজ গিফট পেয়ে মিতু খুশিতে যেন নাচতে থাকে। সহপাঠীদের সাথে
হইহুল্লোড় করতে থাকে। অতঃপর সবাই মিলে জন্মদিনের কেক কেটে আনন্দ করে। আর
সবাই বলে, ‘শুভ জন্মদিন, মিতু।’