বোকা কমান্ডার111আরিফুল ইসলাম সাকিব222ছোট একটি বাগান। rnবাগানে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলগাছ রয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে rnগেছে আঁকাবাঁকা নদী। নদীর পাশেই সবুজঘেরা ছোট একটি গ্রাম। গ্রামে একটি rnস্কুলও রয়েছে। এই গ্রামেই ছিল সহজ সরল রহিম মিয়ার বাস। গ্রামের বাগানটিrn ছিল তার। প্রতিবছর প্রচুর ফল ধরে বাগানের গাছগুলোতে। বাগানটি ছিল তার rnএকমাত্র আয়ের উৎস। ১৯৭১ সাল। দেশে যুদ্ধ লেগেছে। ঢাকায় গোলাগুলি হয়েছে।rn অনেক মানুষ মারা গেছে। সরকার পাকিস্তান থেকে অস্ত্রসহ অগণিত সেনা rnপাঠাচ্ছে। গোলাগুলি দিনকে দিন বাড়তে থাকে। কিছুদিন পর রহিম মিয়ার গ্রামেও rnপাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকল। হানাদার বাহিনী স্কুলে আশ্রয় নিল। গ্রামেরrn সবার মনে আতঙ্ক। তাদের বিশ^াস, কেউ আর প্রাণে বাঁচতে পারবে না। পলাশ ছিল rnসেই গ্রামের নামকরা দুষ্টু ছেলে। একদিন বর্বর হানাদার বাহিনীর কমান্ডারrn কয়েকজন সৈন্য নিয়ে বাগানে এলো। গাছে পাকা পাকা সুস্বাদু ফল দেখে তার জিভে rnপানি চলে এলো। কাউকে কিছু না বলেই লিচুগাছ থেকে লিচু ছিঁড়ে খাওয়া শুরু করে rn দিল। এভাবে নানা ফল খেতে রইল সে। রহিম মিয়া এ দৃশ্য দেখে ভয়ে চুপচাপ রইল। rnপ্রাণের ভয়ে কিছু বলার সাহস পায় না। মনে মনে ভাবে, বলা তো যায় না! কখন কাকেrn ধরে জনমের মতো শেষ করে দেয়। এভাবে রোজ রোজ এসে বাগান থেকে যা ইচ্ছে খেয়ে rnযায়। খাওয়া শেষে যা পারে সাথে নিয়ে যায়। রহিম মিয়া খুব চিন্তিত। গ্রামের rnকয়েকজন লোককে জানাল সে। ভয়ে কেউ কিছু বলল না। আনমনে ভাবছে, কদিন ধরে বাগানেrn পলাশও আসছে না। হয়তো হানাদার বাহিনীর কথা শুনেই আসছে না।পলাশ রহিম rnমিয়াকে চাচা বলে ডাকে। রোজ এসে রহিম চাচার সাথে কাজ করত আর যা খুশি ফল খেত।rn পলাশ জানতে পারল, বাগানের সব ফল হানাদার বাহিনী প্রতিদিন খেয়ে খেয়ে শেষ rnকরে দিচ্ছে। বিকেলবেলা সে রহিম চাচার বাড়ি গেল। পলাশকে দেখেই অবাক! Ñ তুই এ ক’দিন কোথায় ছিলি? জানিস বাগানের প্রায় সব লিচু খেয়ে ফেলেছে। এ বছর হয়তো আর লিচু বিক্রি করা হবে না।পলাশ কিছুক্ষণ চুপ রইল। তারপর বলল, একটা বুদ্ধি তো বের করতেই হবে। লিচুও বিক্রি করতে হবে।Ñ হানাদার বাহিনীর কথা শুনেছিস! যাকে ধরে একদম মেরে পুঁতে ফেলে। কী করি বল তো? পলাশrn রহিম চাচাকে অনেকক্ষণ বুঝাল। তারপর লিচু বিক্রি করতে রাজি হলো। সাত-সকালে rnলিচু পাড়তে যায় দুজন। এ কথা বর্বর হানাদার বাহিনীর কানে পৌঁছতেই ক’জন rnসৈন্য এসে রহিম মিয়াকে ধমকাতে শুরু করল। লিচু যা পেড়েছিল সব নিয়ে যায়। আর rnবলে গেল, গাছ থেকে লিচু পারলে হাত-পা বেঁধে স্যারের (কমান্ডার) কাছে নিয়ে rnযাব। স্যারের মেজাজ খুবই গরম। কখন কী করে বলা যায় না। কী আর করা! দুজন এককোণে চুপচাপ বসে রইল। পলাশ মনে মনে ভাবে, কিছু একটা করতেই হবে। সেদিন দুজন বাড়ি ফিরে গেল। পরেরrn দিন বিকেলবেলা বাগানে হানাদার বাহিনীর কমান্ডারের সাথে কিছু সৈন্যও এলো। rnবাগানের এককোণে ছিল এক আমগাছ। তরতাজা লাল-টুকটুকে আমগুলো কেউ পাড়ত না। কারণrn পাশেই ছিল বিষাক্ত ভিমরুলের বাসা। তাই ভয়ে কেউ গাছের আশপাশেও যায় না। rnকমান্ডার গিয়ে ওই গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করল। একটা পেড়ে দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে rnখাচ্ছিল। আরেকজন সৈন্য গিয়ে আরেকটি আম পাড়ছিল। সাথে সাথেই বিষাক্ত ভিমরুল rnএসে কামড় বসিয়ে দেয়। এভাবে ভিমরুলগুলো ভনভন করে সৈন্যদের কামড়ানো শুরু করে।rn যে যার মতো দৌড়ে পালাল।সন্ধ্যায় দুষ্টু পলাশ তাদের দেখতে যায়। সবাই তোrn ওর ওপর খেপে গেল। পলাশ সুন্দর করে তাদের বুঝিয়ে বিষাক্ত জাগায় চুন লাগিয়ে rnদেয়। পলাশকে এভাবে সেবা করতে দেখে সৈন্যরা সবাই খুশি হলো। সকালবেলা rnকমান্ডার পলাশকে ডেকে এনে আবার চুন মালিশ করে নিল। পাকিস্তানি কমান্ডারrn ছিল পেটুক স্বভাবের লোক। সারা দিন খাই খাই করে। লোভ সামলাতে না পেরে rnপরেরদিন আবার গেল বাগানে। এবার কাঁঠালপাকা ঘ্রাণে মাতাল হয়ে গেল। জোরপূর্বকrn পলাশকে গাছে তুলে দিল। গাছে উঠে দেখল একটি কাঁঠাল পেকে একদম নরম হয়ে আছে। rnওপর থেকে নিচে ফেললে ফেটে যাবে। তাই কমান্ডারকে বলল, স্যার, কাঁঠাল ক্যাচ rnধরতে হবে। নরম কাঁঠাল সরাসরি মাটিতে পড়লে ফেটে যাবে।পলাশের কথায় rnকমান্ডার রাজি হলো। কাঁঠাল ক্যাচ ধরবে। পলাশ ওপর থেকে ছাড়ল। কাঁঠাল হাতে নাrn পড়ে নিচে পড়ে ফেটে ছন্নছাড়া হয়ে গেল। তা দেখে পলাশ মিটমিট হাসছে!কমান্ডারের অবস্থা দেখে পলাশ বললÑ স্যার, এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে যেতে পারেন। একরাত রাখলেই পেকে যাবে। সবাই মিলে খেতে পারবেন।পলাশrn কাঁঠাল নিয়ে কমান্ডারের সাথে গেল। কাঁঠাল দেখে সৈন্যেরা খুব খুশি। একজন rnপলাশকে জিজ্ঞেস করল, কখন পাকবে? উত্তরে পলাশ বলে, কালকেই খেতে পারবেন। rnকমান্ডার বলল, কাল বিকালে তুই চলে আসবি। সবাই একসাথে কাঁঠাল খাব। পরের rnদিন বিকেলবেলা পলাশ গেল। কাঁঠাল ভাঙল। সবাই একসাথে খাওয়া শেষ করল। সবার rnহাতে কাঁঠালের কষ লেগে যায়। এ অবস্থায় কাঁঠালের কষ ছাড়াতে সবাই ব্যস্ত হয়ে rnপড়ে। দুষ্টু পলাশ বুদ্ধি দিল। স্কুলের পেছনে একটা গাছ আছে। ওই গাছের পাতা rnদিয়ে ডলা দিলেই চলে যাবে। বোকা কমান্ডার আদেশ দিল বেশি করে পাতা নিয়ে আসার rnজন্য। এদিকে পলাশ চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে এলো। সৈন্যরা বেশি করে বিছুটি গাছের rnপাতা নিয়ে আসে। সবাই বিছুটি পাতা দিয়ে হাত ডলা শুরু করল। একটু পরই চুলকানি rnশুরু হয়। চুলকাতে চুলকাতে সবার হাত ফুলে কলাগাছ। সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। পশ্চিম rnআকাশে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যের রক্তিম আভা।এদিকে পলাশ গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরrn খবর দিল। রাতে স্কুলে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ওই রাতেই সব হানাদার rnবাহিনী খতম। পলাশকে মুক্তিযোদ্ধারা স্যালুট জানাল। গ্রামের সবাই পলাশের এমনrn সাহসী কাজে খুবই মুগ্ধ হলো। রহিম চাচারও গর্বে বুক ভরে গেল।
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২৩ পিএম (ভিজিট : ৩৪০)