ই-পেপার বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪

শাহজাদপুরে গরুর দুধ ৫ টাকা লিটার
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০, ১১:০৪ পিএম আপডেট: ২৮.০৩.২০২০ ১২:৩৩ এএম  (ভিজিট : ১৯৬)
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার দেড় লাখ দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষকের উৎপাদিত গরুর দুধ খুচরা বাজারে ২০-২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হলেও শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ননফ্যাট দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকায়। সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, করোনার ভয়ে বাজারে ক্রেতা নেই। তাই কৃষকের কিছুটা লোকসান ঠেকাতে দুধ থেকে মেশিনের সাহায্যে পুরো ফ্যাট তুলে নেওয়া হচ্ছে। এরপর ননফ্যাট দুধ ৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে যারা এই ফ্যাট তুলতে পারছেন না দুধ নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। দুধ বিক্রি করতে না পেরে তারা ভ্যানে করে দুধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ২০-২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে। এতে তাদের গো-খাদ্যের দামই উঠছে না। ফলে দুধের রাজধানীখ্যাত পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় কৃষকরা পানির দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ওপর হঠাৎ করেই গো-খাদ্যের দাম বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চরম লোকসানে পড়ে দিশেহারা।
তিনি জানান, আশির দশক থেকে পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও উল্ল­াপাড়া উপজেলা নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ দুগ্ধ অঞ্চল গড়ে উঠেছে। শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ এলাকায় প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি গো-খামার রয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিজন কৃষক বাসগৃহে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি লালন-পালন করে থাকেন। ফলে প্রতিদিন এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ লিটার গরুর দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রচুর দুধ উৎপাদিত হওয়ায় এ এলাকা থেকে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ ডেইরি, ফার্মফ্রেশ, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরি, ব্র্যাকসহ প্রায় ২০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজারজাত করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের দুধ সংগ্রহের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ লিটার। বাকি দুধ স্থানীয় ঘোষ বা দুধ ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুধসহ ঘি ও ছানা তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে থাকে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও মিষ্টিজাত কারখানায় ও চায়ের দোকানে প্রচুর পরিমাণে দুধ প্রয়োজন হয়।
খামারিরা জানান, দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে দুধের চাহিদা কমে গেছে। লোকজন ঢাকা শহর ছাড়তে থাকায় গত দু-তিনদিন ধরে দুধ প্রায় চলছেই না। এছাড়া পাবনা- সিরাজগঞ্জ এলাকায়ও দুধের চাহিদা ব্যাপক কমে গেছে। এ এলাকায় শতাধিক ছানা তৈরির কারখানায় প্রতিদিন ৬০-৭০ হাজার লিটার দুধের প্রয়োজন হতো। কিন্তু এখন করোনার প্রভাবে বেশিরভাগ ছানা তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এ এলাকার চায়ের দোকানগুলো দু’দিন ধরে বন্ধ। মিষ্টি তৈরির দোকানেও দুধের চাহিদা নেই। ফলে গরুর দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে।
খামারিদের অভিযোগ, দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই খামারি ও কৃষকদের দুধ বিক্রি করার প্রধান ভরসা। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দুধ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। শুধু প্রাণ ডেইরি গুঁড়োদুধ তৈরির জন্য ১ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ অব্যাহত রাখলেও বাকি ৯ লাখ দুধ নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। কৃষকদের দাবি, প্রতিলিটার দুধের উৎপাদন খরচ পড়ে ৪২ টাকা; কিন্তু দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিলিটারের দাম দিচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাভুক্ত খামারিদের বাইরের কেউ সেখানে দুধ বিক্রি করতে পারছে না। এ অবস্থায় গত দু’দিন হলো অধিকাংশ কৃষক ও খামারিকে স্থানীয় বাজারগুলোতে ও ভ্যানে করে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে ২০-২৫ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া অনেক খামারি গ্রাহক না পাওয়ায় ১০-১৫ টাকা লিটার দরেও দুধ বিক্রি করছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলার সানিলা এলাকার খামারি আব্দুস সালাম জানান, আমার খামারে দৈনিক ১০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কয়েকদিন আগেও একটি প্রতিষ্ঠান আমার কাছ থেকে দুধ নিয়ে ঢাকায় পাঠাত। অথচ দুদিন ধরে তারা আর নেয় না। তাই বাধ্য হয়ে বাজারে ২০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছি।
সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সেফ মিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ শেখ জানান, এক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার লিটার দুধ ঢাকায় পাঠাতাম। অথচ এখন ৫০০ লিটারের বেশি পাঠাতে পারছি না। যেসব খামারির কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করতাম তারা আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানে দুধ দিতে না পেরে খোলাবাজারে পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের খামারি বেলায়েত হোসেন জানান, তার এলাকায় ২০-২৫ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি হচ্ছে। এর ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাবে হঠাৎ করেই বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। চারদিন আগেও ৪৫ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ২২০ টাকা। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। তিন-চারদিনের ব্যবধানে ৩০০ টাকা মণের খরের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা।
মিল্ক ভিটার আওতাধীন শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী জানান, মিল্ক ভিটা বন্ধ থাকায় তাদের সমিতিভুক্ত কৃষকরা দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা পানির দরে ফেরি করে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন এসব কৃষক।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা কারখানার ডিজিএম ডা. ইদ্রিস আলী জানান, করোনার প্রভাবে সরকারি নির্দেশে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার আবার নির্দেশ দিলে ফ্যাক্টরি চালু করা হবে। তিনি আরও জানান, করোনার প্রভাবে বাজারে দুধের চাহিদা কমে গেছে। এতে কৃষকের সাময়িক অসুবিধা হলেও আমাদের কিছু করার নেই।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close